প্রবাসীরা দেশে 'আটক' বিদেশে বেকার

জরুরি খবর

করোনাকালে চাঁদের দুই পৃষ্ঠের মতো বৈপরীত্য চলছে জনশক্তি খাতে। করোনায় যখন অর্থনীতির সব খাতের বেহাল দশা, তখন রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে একের পর এক রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশে। কিন্তু চাঁদের বিপরীত পৃষ্ঠের মতো ঠিক একই সময়ে নিকষ অন্ধকারে রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের জীবন।
সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বছরওয়ারি হিসাবে এটা রেকর্ড। রেকর্ড হয়েছে মাসওয়ারি হিসাবেও। গত জুন মাসে রেকর্ড ১৮৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। অতীতে কোনো মাসে এত রেমিট্যান্স দেশে আসেনি।
তবে রেমিট্যান্সের সুখবর ম্লান করে দিচ্ছে প্রবাসীদের দুরবস্থা। রেকর্ড গড়া জুন মাসের শেষ দিন পর্যন্ত করোনার কারণে দেশে আটকা পড়ছেন দুই লাখের বেশি প্রবাসী কর্মী। তারা ছুটিতে বা প্রয়োজনে দেশে এসেছিলেন গত ১৮ মার্চের আগে। করোনার কারণে বিমান চলাচল বন্ধ হওয়ায় আর কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রাক্কলন অনুযায়ী, আড়াই লাখ প্রবাসী কর্মী দেশে আটকা পড়েছেন। তারা বেকার দিন কাটাচ্ছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ৩০ জুন পর্যন্ত ২৮ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে বিভিন্ন দেশ। তারা বিদেশে অবৈধভাবে ছিলেন। বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা জানিয়েছেন, দেশে ফেরত আসতে না হলেও তারা আছেন সংকটে। বিভিন্ন দেশে করোনা ঠেকানোর লকডাউনের কারণে অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশি বেকার। তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানা সম্ভব না হলেও অভিবাসী খাত সংশ্নিষ্টদের ধারণা, প্রবাসে কর্মহীন বাংলাদেশির সংখ্যা ৩০ লাখেরও বেশি হবে। তবে কয়েকটি দেশে লকডাউন উঠে যাওয়ায় অনেকেই কাজে ফিরেছেন। তবে সবাই কাজে যোগ দিতে পারেননি।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সদস্য রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা এক হাজার ৩০৬। এর মধ্যে ৩১৫টির দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ৭৮ হাজার ৪২৫ জন কর্মীর বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার প্রক্রিয়া শেষের পথে ছিল গত মার্চে। করোনার কারণে তারা বিদেশ যেতে পারেননি। ধারণা করা হচ্ছে, সব এজেন্সির মিলিয়ে প্রায় সোয়া লাখ কর্মী ভিসা, কাজের অনুমতিসহ সব প্রক্রিয়া শেষ করেও বিদেশ যেতে পারেননি। অথচ তারা ইতোমধ্যে বিদেশ যাওয়ার খরচের বড় অংশ এজেন্সিকে দিয়েছেন। তাদের প্রায় হাজার কোটি আটকা পড়েছে।
বিপদে আছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও। জনশক্তি খাত প্রায় লাখখানেক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। মার্চ থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানো বন্ধ। এতে চার মাস ধরে বেকার রিক্রুটিং এজেন্সিতে কর্মরত এবং এর সঙ্গে সংশ্নিষ্টরা।
সংকট থেকে উত্তরণে বিদেশফেরত কর্মীদের জন্য ৭০০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। ৪ শতাংশ সুদে দেশে ফেরা কর্মীরা ঋণ পাবেন এ প্যাকেজের আওতায়। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর জামানতের অর্ধেক ঋণবাবদ দিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তবে অভিবাসন খাত সংশ্নিষ্টরা বলছেন, আরও সহায়তা প্রয়োজন।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান সমকালকে বলেছেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দুই থেকেই আড়াই লাখের মতো কর্মী দেশে আটকা পড়েছেন। প্রতি মাসে গড়ে ৫০ হাজার নতুন কর্মী বিদেশ যান। এ হিসাবে চার মাসে দুই লাখ কর্মীর বিদেশ যাওয়া আটকে গেছে। ফেরত এসেছেন অনেকে।
কত কর্মী দেশে আটকা পড়েছেন :স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসে চার লাখ ৪০ হাজার ১৭৫ জন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী বিদেশ থেকে দেশে আসেন। তবে তাদের সবাই প্রবাসী কর্মী নন। কেউ ফিরেছেন বেড়ানো শেষে, অনেকে বিদেশে কাজ শেষে।
ব্র্যাকের শরিফুল হাসান জানান, তাদের প্রাক্কলন অনুযায়ী এই চার লাখ বাংলাদেশির মধ্যে অন্তত দুই লাখ ছিলেন প্রবাসী কর্মী। ইউরোপ, আমেরিকা ফেরতদের প্রবাসী কর্মী হিসাবে ধরা হয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ওই এক মাসে সৌদি আরব থেকে ৪১ হাজার, আরব আমিরাত থেকে ৩৮ হাজার, মালয়েশিয়া থেকে ১৯ হাজারসহ প্রায় লাখখানেক বাংলাদেশি দেশে ফেরেন। শরিফুল হাসান বলেছেন, এই তিন বড় শ্রমবাজার থেকে ফেরা বাংলাদেশিদের বড় অংশই প্রবাসী কর্মী। তারা ছুটিতে, নয়তো প্রয়োজনে দেশে ফিরেছেন। এ ছাড়া ওমান, কাতার, কুয়েত, জর্ডান, লেবানন, সিঙ্গাপুর থেকে আরও লাখখানেক কর্মী ফিরেছেন। যারা করোনার কারণে দেশে আটকা পড়ছেন।
দেশে আটকা পড়াদের একজন ঢাকার অদূরের কেরানীগঞ্জের তারানগর গ্রামের আবুল হোসেন। তিনি ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়া থেকে ফেরেন। দুই মাস ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু করোনার কারণে ফিরতে পারেননি। মালয়েশিয়ায় ফিরে ভিসা ও কাজের অনুমতি নবায়ন করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ফিরতে না পারায় আবুল হোসেনের ভিসা ও কাজের অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
একই অবস্থা ময়মনসিংহ সদরের শম্ভুগঞ্জের বাসিন্দা আরিফ হোসেনের। কাতার থেকে ফেব্রুয়ারিতে ফেরা এই তরুণ করোনার কারণে কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না। দেশে বেকার সময় কাটাচ্ছেন। আবুল হোসেন ও আরিফ দু'জনে জানালেন, গত ছয় মাসে তাদের একটি টাকাও আয় হয়নি। সঞ্চ
Previous Post Next Post