সব খবর Facebook পেতে লাইক দিয়ে রাখুন জরুরি খবর পেইজে
সেখানে গিয়ে মাসে সাড়ে পাঁচশ রিয়েল বেতনে মেলে ট্রাফিক সিগন্যালে ইলেকট্রিক মিস্ত্রীর কাজ। এই টাকা দিয়েই গ্রামে থাকা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খরচ, ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা ও স্ত্রী-সন্তানের খরচ মেটাতেন তিনি।
রেজাউল ইসলাম জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফেরেন। মার্চের ২০ তারিখে সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তার আগেই বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এজন্য প্রায় চার মাস ধরে দেশে থাকলেও এখানে তার আয়ের কোনো পথ নেই। এদিকে এই কয় মাসে দেশে থাকায় পরিবারের খরচ মেটাতে তাকে আবারও প্রায় লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিতে হয়েছে।
ঋণের টাকা কবে কীভাবে শোধ করবেন- তা নিয়ে দুর্ভাবনায় থাকা রেজাউল বলেন, “ফ্লাইট চালু হলে হয়ত ওই দেশে ফিরে যেতে পারব। সেখানে গিয়ে আয় করে ঋণের টাকা ফেরত দিতে পারব। কিন্তু কবে যেতে পারব, তারই তো ঠিক নেই। আর কতদিন ঋণ নিয়ে চলতে পারব, তাও তো জানি না।”
রেজাউলের মতো সিঙ্গাইরের আরেক বাসিন্দা মো. শাহীনও (৩৫) ২০১০ সালে শ্রমিক হিসেবে কাতারে গিয়েছিলেন আত্মীয়-স্বজনদের থেকে ঋণ, জমি বিক্রি ও সুদে টাকা নিয়ে। কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে তিনিও ছুটিতে এসে দেশে আটকা পড়েছেন।
শাহীন জানান, ফেব্রুযারিতে ছুটি নিয়ে দেশে আসার পর এপ্রিলে তার ফেরার কথা থাকলেও এখন আর ফিরতে পারছেন না। উল্টো বেঁচে থাকার জন্য আবারও তাকে স্বজনদের কাছে হাত পাততে হচ্ছে।
“কাতারে গিয়েছিলাম ঋণ করে। সেখানে থেকে যা আয় করতাম তা দিয়েই স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের খরচ চালাতাম। কিন্তু ছুটিতে দেশে এসে এখন আর ফিরে যেতে পারছি না। এখন ঋণ করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। জানি না কতদিন ঋণ পাব।”
রেজাউল ও শাহীনের মতো প্রবাসী কর্মীদের আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। বিদেশে থাকা এমন কর্মীর সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি।
এর মধ্যে লক্ষাধিক শ্রমিক মহামারীর মধ্যে দেশে এসে আটকা পড়েছেন বলে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাস পরীক্ষার সনদের জন্য গত মার্চের প্রথম দিকে মহাখালীর আইইডিসিআরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন কুয়েত গমনেচ্ছুরা।
তারা বলছেন, এই শ্রমিকেরা দেশে ফিরে যেমন ‘মানবেতর জীবনযাপন করছেন’ তেমনি ভিসাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক হওয়ার পরেও আরও অন্তত লক্ষাধিক শ্রমিকের বিদেশযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরীফুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর আগে যখন ফ্লাইট চলাচল ছিল অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি দুই লাখেরও বেশি শ্রমিক দেশে ছুটিতে এসেছিলেন। যারা এখনও যেতে পারেননি। এরপর যখন ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেল তখন গত দুই মাসে চার্টার ফ্লাইটে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক দেশে আসেন।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রতি মাসে গড়ে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার লোক বিদেশে যেত। সেই হিসাবে করোনার কারণে যদি বলি তাহলে আমাদের মার্চ থেকে জুন এই চার মাসে প্রায় দুই লাখ কর্মী বিদেশ যেতে পারেননি। অন্তত লাখখানেক কর্মীর ভিসা, পাসপোর্ট সব কিছু থাকার পরও তারা করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশে যেতে পারেননি।
“যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে কিন্তু কোনো দেশ আমাদের কর্মী নেবে না। তাই অন্যান্য দেশে যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শেষ হবে, সেই সময়ের মধ্যে আমাদের পরিস্থিতিটাও যেন শেষ হয়। এটা আমাদের করতেই হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ আমাদের কর্মী নেবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দেশে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থাকে।”
শরীফুল হাসানের এই শঙ্কা এরইমধ্যে বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। গত মাসের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হওয়ার পর ইতালিতে ফিরতে শুরু করেন প্রবাসীরা। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে হাজারখানেক বাংলাদেশি ইতালিতে পৌঁছেছেন, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশের করোনাভাইরাস ধরা পড়ায় দুই দিন আগেই বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ করেছে ইতালি।
এরপর বুধবার দেড় শতাধিক বাংলাদেশি কাতার এয়ারওয়েজের দুটি ফ্লাইটে ইতালিতে পৌঁছালে তাদের উড়োজাহাজ থেকে নামতে দেওয়া হয়নি। ওই দুই বিমানে করেই তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে অচিরেই বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে প্রবাসী শ্রমিকদের ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট-রামরুর প্রোগ্রাম বিভাগের পরিচালক মেরিনা সুলতানা।
সে কারণে দেশে তাদের অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা বিদেশ থেকে ফিরে আসছেন তাদের জন্য সরকার এরইমধ্যে সহায়তা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা যেতে পারছে না, যাদের এই মুহূর্তে কাজ নেই, আয় নেই তাদের বেঁচে থাকার জায়গাটাকে খুব দ্রুত দেখ
Tags
প্রবাসী খবর